নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বহিস্কৃত অবস্থায় থাকার পর এবার সুবিধা অনুযায়ী জাকির খানের মুক্তি পরিষদে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে বিএনপির সুবিধাজনক অবস্থান দেখে যে কোনো উপায়েই হোক বিএনপিতে ঠাঁই নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই সুলতান আহমেদ। সেই সাথে সিটি কর্পোরেশনের আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভোটারদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে এখন থেকই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুলতান আহমেদের রাজনীতি জীবন শুরু হয় জাতীয় পার্টির মাধ্যমে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের হাত ধরে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। সেই সাথে জাতীয় পার্টি থেকে ২২ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
এদিকে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল সুলতান আহমেদের শ্বশুড় বাড়ির দিকে আত্মীয় হন। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। আতাউর রহমান মুকুলের একছত্র আধিপত্যের বলে তিনি বিএনপিতে পদায়ন হয়ে যান। সেই সাথে বিএনপির ভোটারদের সমর্থনের তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে তিনি জাতীয় পার্টির মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাই বিএনপির ক্ষমতা হারানোর পর তিনি আবারও ওসমান পরিবারের আশ্রয়ে আসেন। একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে সকল নির্বাচনে কাজ করেন। পাশপাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সদস্যদের পক্ষে কাজ করেন। বিভিন্ন সময় ভোটকেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদেরকেও বের করে দিয়েছেন।
সবশষে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেলিম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা করতে গিয়ে বিএনপিতে থেকে বহিস্কৃত হন। অনেকদিন এই বহিস্কৃত অবস্থায় থাকার পর এবার আবারও সুলতান আহমেদ বিএনপিতে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন। সে লক্ষ্যে তিনি জাকির খানের মুক্তি পরিষদে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। একই সাথে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সমরক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী সেলিম ওসমানের নির্বাচনী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
এই সমাবেশে অন্যান্য অতিথিদের সাথে বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়ক সুলতান আহমেদ উপস্থিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি সেলিম ওসমানের পক্ষে মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। তাদের সাথে আরও দুইজন বিএনপি নেতা উপস্থিত হয়েছিলেন।
তাদের উপস্থিতি প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, এদেরকে আমি ভালোবাসি ওরা আমাকে ভালোবাসে। আমরা আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি করি ওরা আমাদের ভাই। আমি বারবার বলেছি আমার নারায়ণগঞ্জের বন্দরের পুলিশ যেন তাদের ডিস্টার্ব না করে। ওরা আমাদের সাথে থাকবে। ওরা আমাদের সাথেই ৭ তারিখে ভোট দেয়ার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করবে। বন্দরের বিএনপিরা আমাকে বলেছে আমরা কোনো রকমের ডিস্টার্ব করবো না। আমাদের ১৪ গোষ্ঠী নিয়ে সময়মতো আপনাকে ভোট দিতে যাবো।
সেলিম ওসমানের এই বক্তব্যের পরই সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে সুলতান আহমেদ সহ বিএনপির ৬ জন নেতা বহিস্কার করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্কলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিস্কারের কথা বলা হয়। তাদেরকে প্রাথমিক সদস্য পদ সহ সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টি ব্যাকফুটে চলে যায়। সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান আত্মগোপনে চলে যান। সেই সাথে আওয়ামী লীগের ব্যাকফুটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসে বিএনপি।
বিএনপির এই সুবিধাজনক অবস্থান দেখে আবারও বিএনপিতে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন সুলতান আহমেদ। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বর্তমান বিএনপিতে আলোচনায় থাকা জাকির খানের পক্ষ নিয়েছেন তিনি। প্রতিনিয়তই জাকির খানের মুক্তির দাবীতে সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। জাকির খানের মুক্তির দাবীতে তিনি সরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। সেই সাথে ভবিষ্যতের জন্য বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করার চেষ্টা করছেন।
সূত্রঃ সময়ের নারায়ণগঞ্জ
আপনার মতামত লিখুন